ওসির গুলি করার বর্ণনা ইসিতে এসে দিলেন খোকন

নোয়াখালী-১ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় এক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে গুলির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করে বুধবার বিকেলে দেখা করে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে সিইসিকে অবহিত করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ একাকার হয়ে গেছে। যেটা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থি বলে আমি মনে করি এবং এটা করা উচিত না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব করছে তাদেরকে পরিবর্তন করার জন্য আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার কথাও বলেছি। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল ছিল না, কিছুই ছিল না। আমার গণসংযোগের পেছনে পুলিশ ছিল, সামনেও ছিল। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আমার গণসংযোগের বিষয়ে অবহিত করা ছিল।

এক পর্যায়ে সোনাইমুড়ী থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ মানুষের উপর এলোপাথারি গুলি করা শুরু করলো। আমি নিষেধ করে বললাম গুলি করছেন কেনো? গুলি স্টপ করেন প্লিজ। তারপরও ওসি সাহেব গুলি স্টপ করছেন না। সম্ভবত শর্টগান ছিল- স্প্লিন্টারের আঘাতে লোকজন পড়ে যাচ্ছিল।

আমি বললাম মানুষকে গুলি কইরেন না। গুলি করলে আমাকে করেন। তখন আমাকে তিনি গুলি করে দিলেন! আমার কণ্ঠনালীর ওখানে গুলি লেগে রক্ত ঝরছিল। আমি বললাম আপনি আমাকে গুলি করে দিলেন?

আমাকে গুলি করার পর ওসি বললেন আপনি ওদিকে যান। তার দেখানো দিকে যাওয়ার সময় পেছনে থেকে আবার গুলি করলেন। আমার মোট সাতটা গুলি লাগছে। পেছনে ছয়টা সামনে একটা।

খোকন আরো বলেন, আমি সিইসিকে বললাম যে পুলিশ কী বলল না বলল এটা কোনো মেটার না। আমি একজন ল’ইয়ার হিসেবে, ব্যারিস্টার হিসেবে বলতেছি এই হলো ঘটনা। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগের লোক ছিল না।

পরবর্তীতে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পুলিশের প্রহরায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির যত দোকানপাট, হাসপাতাল সব ভাঙচুর করছে। ভাঙচুর করার পর তারা ভিন্ন স্টোরি বানিয়েছে।

এ আইনজীবি আরো বলেন, চাটখিল থানার ওসি সামসুদ্দিন বিএনপির লোক ধরে নিয়ে ঘুষ নেন। প্রতিদিন ১৫-২০ জন ধরবেন। কোনো মামলা নাই কিছু নাই। সেখান থেকে হয়তো ৫জনকে রিকোস্টে ছাড়ছেন। আর ৫ জনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। আর ৫জনকে চালান করে দিচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আছে- যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তা তিনি মানছেন না।

খোকন আরো বলেন, আমার এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। চাটখীল ও সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কাছে যে অস্ত্র আছে, দুই-তিন থানায়ও এতো অস্ত্র নাই। অস্ত্র উদ্ধার করেন। উনারা (কমিশন) বলেছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক অবৈধ অস্ত্রধারীরা এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন করছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ভোট চাচ্ছে না। তাদের প্রার্থী কর্মীরা ভোট চাচ্ছে না। মানুষকে হয়রানি করছে, সন্ত্রাস করছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করছে, মানুষকে আহত করছে। শুধু আমার এলাকায়ই না, এটা সারা বাংলাদেশে একই কাজ করছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথাও ভোট চাচ্ছে না। তারা মিছিলে হামলা করতেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এসব বিষয়ে জানানোর পর সিইসি বলেছেন- আমরা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে আমরা বদ্ধ পরিকর।

তিনি বলেন, আমি প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও সিইসিকে বলেছি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। কমিশনের দায়িত্ব প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া, সকল ভোটাররা তাদের ইচ্ছামত ভোট দিতে পারেন ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া।

আমি সোনাইমুড়ী থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছি। চাটখীল থানার ওসির বিষয়েও তদন্ত করে তার প্রত্যাহার চেয়েছি। এগুলি উনি শুনেছেন। উনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।

সূত্র: পরিবর্তন, বাংলাট্রিবিউন